আদিবাসী শব্দ নিয়ে বিরোধ
পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সামনে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০
- আপলোড সময় : ১৬-০১-২০২৫ ০৫:৩৮:৫২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৬-০১-২০২৫ ০৫:৩৮:৫২ অপরাহ্ন
২০২৫ সালের নবম-দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি বাতিল করায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সামনে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ ও ‘পাহাড়ি ছাত্র-জনতা’। এতে সাংবাদিকসহ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন-সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা (২৪), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইসাবা (২৬), ঢাবির লোক প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রেংইয়াং (২৯), ধনযেত্রা (৩০), শৈলী (২৭), দনওয়াই ম্রো (২৪), ঢাবি শিক্ষার্থী তনিচিরাং (৩০) ও ডিবিসির সাংবাদিক জুয়েল মার (৩৫)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বুধবার সকালে রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এনসিটিবির সামনে অবস্থান নেন ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’র সদস্যরা। পরে বেলা ১২টার দিকে পাহাড়ি ছাত্র ও জনতাদের একটি দল সেখানে পৌঁছালে দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এসময় পুলিশ দু’পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করলেও মানব ব্যারিকেড ভেঙে এনসিটিবির সামনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। ‘আদিবাসী’ শব্দ রাখার পক্ষে আন্দোলনকারী বিভূতিভূষণ মাহাতো অভিযোগ করে বলেন, স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির সদস্যরা আগে থেকেই হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তারা আমাদের হুমকিও দিয়েছিল, এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচি না দেয়ার জন্য। তারা ক্রিকেট স্ট্যাম্পের মাথায় জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রস্তুত ছিল হামলা করার জন্য।
অন্যদিকে সংঘর্ষের পরে আবারও এনসিটিবির সামনে অবস্থান নেন ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ সদস্যরা। এ ঘটনায় সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও ১৫ জনের মতো আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’র আহ্বায়ক জিয়াউল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আমাদের জায়গায় এখনও রয়েছি। আমরা তাদের ওপর হামলা চালাইনি। তারাই আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
এসময় তাদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেরও অনেককেই দেখা গেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সংগঠন। কিন্তু অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আমাদের শাখা রয়েছে। আর যেহেতু এটি স্বার্বভোমত্বের ইস্যু, তাই অনেকেই এখানে আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিয়াজুল বাশার বলেন, আমি শুনেছি ১৩ থেকে ১৪ জন আহত হয়েছে। আদিবাসী পরিচয়ধারীদের বেশি আহত হয়েছেন। ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়ে এনসিটিবি’র একজনও আহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, তারা (পাহাড়ি) যদি এসে আমাদের বলতো, তাহলে আমরা তাদের কথাও শুনতাম। আগে একটি পক্ষ এসে আমাদের কাছে তাদের দাবি জানিয়েছে। তারা আসলে তাদের কথাও শুনতাম। অথচ একটি চক্রের ইন্ধনে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হয়েছে।
সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা সংগঠনের কর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শান্তিময় চাকমা বলেন, পাঠ্য বইয়ের আদিবাসী শব্দ পুনরায় লিখনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে মতিঝিলের এনসিটিবির ভবনের সামনে আমরা যাই। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সময় স্টুডেন্ট মুভমেন্ট ফর সভারেন্টি নামের সংগঠনের অজ্ঞাতনামা কয়েকজন অতর্কিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের সাতজন ও এক সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, মতিঝিলের এনসিটিবির ভবনের সামনে থেকে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা সংগঠনের সাতজন কর্মী আহত ও একজন সাংবাদিক আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন। বর্তমানে জরুরি বিভাগের বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের চিকিৎসা চলছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ